শেষবার বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ে এতটা উন্মাদনা কবে দেখেছেন আপনি? উত্তরটা সবারই জানা। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। সর্বকালের সেরাদের তালিকায় থাকা লিওনেল মেসি তার আর্জেন্টাইন সতীর্থদের নিয়ে যেদিন পা রেখেছিলেন ঢাকায়। এরপর নারী দল সাফ জিতেছে, বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এসেছে সাফল্য। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সাংবাদিক দুনিয়া। কিংবা পাড়ার চায়ের টং দোকান থেকে ঘরের বসে থাকা দুই কিশোর ভাইয়ের আলাপচারিতা… সবখানে নাম একটাই হামজা চৌধুরী।
বাংলাদেশ ফুটবলে অন্তত পুরুষ ফুটবলে আনন্দের উপলক্ষ্য খুব একটা নিয়মিত দৃশ্য নয়। এখানে লেবাননের সঙ্গে ড্র করতে পারলেই টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া গর্জন করে। কিংস অ্যারেনার ৬ হাজার দর্শকই হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের অস্বস্তির কারণ। সাফল্য নেই, প্রাপ্তির খাতায় বড় কিছু নেই। তবু ভালোবাসা বিলিয়ে দেয়া যায় প্রতিনিয়ত। বাংলাদেশ ফুটবলের চিত্রটা আসলে এমনই।
এমন এক দেশে, র্যাঙ্কিংয়ের দুইশ এর আশেপাশে যাদের অবস্থান, সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলে আসা একজন ফুটবলার। সেটা দেশের ফুটবলে উৎসবের আমেজ এনে দেবে তা নিয়ে কোনো সংশয় প্রকাশ করা চলে না। লোন ডিলে আপাতত প্রিমিয়ার লিগের লেস্টার ছেড়ে শেফিল্ড ইউনাইটেডের জার্সিতে খেলছেন তবে আদতে হামজা তো লেস্টারেরই ঘরের ছেলে।
এর উত্তর এখনই দেয়া বেশ কঠিন। মাঠের খেলায় ফুটবল ১১ জনের খেলা। একা হাতে ম্যাচ জেতানো যায় বটে, তবে সেজন্য দরকার হয় সতীর্থদের পর্যাপ্ত সহায়তা। নিজের কাজটা হামজা ঠিকঠাক করলেও জামাল ভূঁইয়া, মোরসালিন, সাদ কিংবা রহমত-ইসা ফয়সালরা হামজাকে কতটা সাহায্য করতে পারছেন সেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
হামজাকে বলা যেতে পারে অর্কাস্ট্রেটর ঘরানার ফুটবলার। মাঝমাঠ থেকে বল ডিস্ট্রিবিউশন, মাঠের নিয়ন্ত্রণ রাখা, ফাইনাল থার্ডে কার্যকরী বল পাস করা কিংবা ডিফেন্সচেরা থ্রু পাসিং হামজার খেলার ধরণে সবচেয়ে বড় শক্তি। মিডফিল্ডে হামজার পজিশনকে মূলত বলা হয় ‘রেজিস্তা’ নামে। ফুটবলে এই পজিশনের উদ্ভব ইতালি থেকে। এর মূল কাজ ম্যাচের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করা।
কিন্তু হামজা যা কিছু করতে চান মাঠে সেটা বোঝার বা কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশের ফুটবলকেও হতে হবে আরও পরিপক্ব।
হামজার আগমনের আরও একটা প্রভাব বাংলাদেশ ফুটবলে এরইমাঝে পড়েছে। দেশের ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সরের খরা দূর হয়েছে সম্প্রতি। বেসকারি ব্যাংক ইউসিবি দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের পাশে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান দৌড় হয়েছে জার্সির স্পন্সর। প্রায় এক যুগ কোনো স্পন্সর না পাওয়া বাংলাদেশ ফুটবলের আকস্মিক এই উত্থানের গল্পে হামজা মিশে আছেন খুব ভালোভাবে। হামজা এবং স্পন্সরদের একইসঙ্গে আগমন একেবারেই কাকতালীয়– এমনটা মেনে নেয়াও কিছুটা কষ্টকর।
Leave a Reply